সারারাত ঘুম হয়নি।নতুন বিয়ে হয়েছে।বিয়েটা পরিবার থেকেই হয়েছে।দেড় মাস হলো বিয়ে হয়েছে আর সেদিন থেকেই ঘুমাতে পারিনা। অথচ এই বিয়ে নিয়ে কত্ত স্বপ্ন দেখতাম!! ছিমছাম, সুঠাম দে’হের হ্যান্ডসাম রাজপুত্রের মতো দে’খতে একটা ছে’লের সাথে আমা’র বিয়ে হবে। কত রোমান্টিক কথা বলবে,
একসাথে কত্ত মধুর স্মৃ’তি, কত্ত জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবে!! তার সাথে রাত জাগারও প্ল্যান ছিল। কিন্তু সেই রাত জাগা আর এখনকার রাত জাগার মধ্যে অনেক তফাৎ।ইচ্ছে ছিল আম’রা একসাথে রাতের বেলা বেলকনিতে বসে কফি খাবো
আর জোৎস্না দেখবো, কোন কোন দিন রাতে ছাদে শুয়ে শুয়ে চাঁদের আলো গায়ে মাখবো, হয়তোবা কখনো কখনো তারা গুনবো। একটা সিনেমা সিনেমা ফিলিংস থাকবে।।
কিন্তু কি পেলাম আমি?? পেলাম তো এক ভুড়িওয়ালা কালো চামড়ার বির’ক্তিকর লোককে, যে সারারাত নাক ডেকে ডেকে ঘুমোয়।ঘুমের ঘোরে সে অনবরত হাত পা ছুঁড়তে থাকে। আমাকে সে মাঝে মাঝে এমন ভাবে কোলবালিস বানিয়ে ঘুমোয় যে আমা’র নিঃশ্বা’স আ’ট’কে যেতে চায়।
আর আমাকে জেগে থাকতে হয়। প্রথম প্রথম খুব মেজাজ খা’রাপ হতো, রাগ লাগতো নিজে’র ভাগ্যের উপর। কিন্তু এখন আর একটুও খা’রাপ লাগেনা। দিন যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে এই বি’ষয়টা আমি ইনজয় করছি। দিনকে দিন আমা’র ধারণা, ভালো লা’গা- খা’রাপ লা’গার ধ’রণ চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।
আমা’র বরের নাম সোহানুর রহমান। আমি এখনও সামনাসামনি নাম ধ’রে ডেকে উঠতে পারিনি। ২০-২১ বছরের একটা মে’য়ের পক্ষে ৩২-৩৩ বছরের একটা ভুড়িওয়ালা লোকের নাম ধ’রে ডা’কা কি সম্ভব?? আমি সোহানকে
এখনো আপনি করেই ডাকিতুমি বলতে অস্বস্তি লাগে।।সোহান একটা প্রাইভেট জব করে। সোহানকে স্পেশালি আমা’র বাবার খুব পছন্দ। বাবার পছন্দের কারণেই আমা’র বিয়েটা করা। ব’য়সের এত্ত গ্যাপ থাকার কারণে এবং
প্রথম অব’স্থায় সোহানকে পছন্দ না হওয়াতে আমি অনেক আ’পত্তি করেছিলাম বিয়েতে। কিন্তু ওই যে কপালের লিখন না যায় খন্ডন। বিয়েটা হয়েই গেলো।সোহান অফিস যাওয়ার পর শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। এমন সময়ে দরজায় কলিং বেল বাজলো ২ বার। চোখ খু’লে দেখলাম ১১.২৫ বাজে।
এই সময় আবার কে আসবে ভাবতে ভাবতে গেট খু’লে দেখি সোহান। একি আপনি?? এই সময়? কিছু হয়েছে কি?? আপনি তো এই সময় আসেননা।
ও আগে।। আর হ্যাঁ শোন পানিতে বরফ দিও একটু।আমি পানি নিতে
এগুতে এগুতে বললাম দরজাটা লা’গিয়ে দিন।। তারপর একগ্লাস নরমাল পানি দিলাম তাকে।একি পানিতে বরফ দাওনি? পানিটা তো গরম হয়ে আছে।। ওইটা খেয়ে তৃ’প্তি হবেনা।
না হলে না হবে। ভু’লে গে’লেন কয়েকদিন আগে ঠান্ডা পানি খেয়ে কি অবস্থা হয়েছিল?? আজব যেটা খেলে স’মস্যা হয় সেটা খান কেন??ওরে বাবা! ঠিকআছে ঠান্ডা পানি আর খাবোনা যাও। কিন্তু আমা’র বৌ-টা রাগ করলে তো আরো সুন্দর লাগে?? দেখি একটু কাছে আসো তো!আহ্ কি করছেন কি বলুন তো? ভীম’রতি ধ’রেছে নাকি?? যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি চা বানাচ্ছি।।
ঠিক আছে! যাচ্ছি। ইয়ে মানে বলছিলাম কি চায়ে একটু চিনি বেশী দিও কেমন??এই লোকটাকে প্রথম প্রথম খুব বেশি বির’ক্ত লাগতো, যদিও মুখে প্র’কাশ করিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হয় একটু একটু ভালো ও লাগছে। নাহ একটু না, অনেক বেশী ভালো লাগছে।
প্রথম প্রথম যেগুলা অসহ্য লাগতো এখন সেগুলাই ভালো লাগছে। আচ্ছা আমি কি ওনার প্রে’মে প’ড়ে যাচ্ছি নাকি??এই যে নিন আপনার চা।। আদা চা করেছি আর হ্যাঁ, চিনি ছাড়া। এটাই খেয়ে নিন। আপনার এখন থেকে কিছু কিছু জিনিস ক’ন্ট্রোল ক’রতে হবে। এ নিয়ে আর কোন কথা বলা যাবেনা।
ইয়ে এক চামুচ তো দিতে পারো তাইনা?এক চিমটি ও না। ওটাই খেয়ে নিন। এখন বলুন তো এত্ত আগে কেন আ’সলেন আজকে?? কিছু হয়েছে??আজ একটা কা’হিনী ঘ’টেছে। আমা’র এক কলিগের বড় বোনের জন্য র’ক্তের দরকার ছিল। কোথাও পাচ্ছিলনা,
আর আমা’র সাথে মিলে গেলো তাই আমি ডোনেট করলাম। এই জন্য আজ বস ছুটি দিয়ে দিল।মানে কি? আপনি ব্লাড ডোনেট করে এসেছেন? আর আমি কিছুই জানিনা? আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেননি??না, তা না। আ’সলে ভাবলাম তুমি যদি টেনশন করো!
বয়েই গেছে আমা’র টেনশন ক’রতে। আচ্ছা স্যালাইন খেয়েছেন? আর ডাব খেয়েছেন কি? বাসায় তো কোনটাই নেই।আচ্ছা এতো অস্থির হচ্ছো কেন?? স্যালাইন খাইনি তবে জুস দিয়েছিল জুস খেয়েছি। আর আসার সময় একটা ডাব খেয়েছি।
।ধুর! জুস খেয়ে কি হবে? সব কেমিক্যাল।ডাব টা কাজে লাগবে। দাড়ান এককাজ করি! পানি, চিনি আর লবণ দিয়ে স্যালাইন বানিয়ে আনি। আর একটা ডিম সেদ্ধ আনি।
এই শোন শোন, এখন দরকার নেই। আসো, আমা’র পাশে একটু বসো, গল্প করি।।বসতে পারবোনা। আপনি ওয়েট করুন, আমি আসছি এখনি।ডিম সেদ্ধ, আর স্যালাইন বানিয়ে এনে দেখি “ও” ঘুমিয়ে প’ড়েছে। ওকে জাগাতে ই’চ্ছা করছেনা। কেন জানিনা ওর
ঘুমানো দে’খতে ভালো লাগছে। মানুষটার উপর কেন জানিনা মায়া প’ড়ে গেছে। কালো একটা মানুষ যে এত্ত সুন্দর হতে পারে আগে বুঝিনি। কালো অনেক মানুষ আছে যারা অনেক সুন্দর হয়। কিন্তু তারা কেউ আমা’র বরের মতো
সুন্দর না। কি আজব যেই মানুষটাকেই কয়েকদিন আগে কুৎসিত মনে হতো তাকেই আজ সবচেয়ে সুন্দর পুরু’ষ মনে হয়। তাকে কেউ খা’রাপ বললে সহ্য ক’রতে পারিনা। আচ্ছা এটাই কি প্রে’ম?প্রে’মে প’ড়েছি আমি?? কেন জানিনা ই’চ্ছা করছে ওর কোলবালিশ হয়ে যাই। ও ঘুমোবে আর আমি দেখবো।।কখন যেন ঘুমিয়ে গেছিলাম নিজেও জানিনা। উঠে দেখি ২.৩৮ বাজে
কয়েক সেকেন্ড মনে হলো সব ভূলে গেছি। তারপর মনে হলো সোহান তো বাড়িতে আছে। একি! দুপুরেতো রান্নাই করিনি আজকে। ও খাবে কি?? আমি কখন কি করবো? এমনিতে সকালে মানুষটাকে রাতের বাঁসি রুটি-তরকারি খেয়ে
অফিসে যেতে হয়েছে। আবার দুপুরেও একটু খাবার রান্না করে দিতে পারলামনা? কিন্তু ও ই বা কোথায় গেলো? রান্না ঘরের দিকে গিয়ে দেখি মশায় রান্না করছেন।
ওমা! একি!! আপনি? কি করছেন? আমাকে ডাকেননি কেন??তুমি ঘুমিয়ে পরেছিলে। তাই ডাকিনি। টি- টেবিলে স্যালাইন আর ডিম রাখা ছিল খেয়ে নিয়েছি। তারপর ভাবলাম আজ তোমাকে না ডাকি। একদিন না হয় আমি রান্না করে খাওয়াই নিজে’র
বৌ- কে। ব্যাচেলর থাকতে তো মাঝে মাঝেই রান্না করে ব’ন্ধুরা মিলে খেতাম।মনে মনে যে খুশি হয়েছি সেটা কিছুতেই প্র’কাশ করা যাবেনা। আমি একটু চেঁচিয়ে বললাম, আপনি
তো সব কিছু অগোছালো করে দিলেন। আমা’র সব কাজ বাড়িয়ে দিয়েছেন। কে ক’রতে বলেছে আপনাকে এসব? আমাকে ডাকলেই তো হতো।।সবসময় আমি- তুমি, আমি- তুমি ভাবো কেন বলতো? আম’রা ভাবতে পারোনা?
আমি তুমি আ’লাদা না ভেবে দুইটা যোগ করে আম’রাভাববে কেমন? শোন দুইজন মিলেগুছিয়ে রাখবো।। আর তোমা’র থেকে আমি অনেক বড়। আমি তোমা’র স্বা’মী। মনে মনে যে খুশি হয়েছো এইটা প্র’কাশ ক’রতে দোষের কিছু নেই।
ছোট মে’য়ে ছোট মে’য়ের মতই থাকবা। এখন এদিকে আসো, দেখো তো রান্না কেমন হয়েছে? ভাত, মুরগীর মাংস আর ডাল। চলবেনা??রান্নাটা মজা হয়েছে। কিন্তু চলবেনা।কেন? আর কিছু লাগতো?নাহ আ’সলে চলবেনা কারণ দৌঁড়াবে। মজা করালাম একটু আর কি।শব্দ করে হেসে হু’ম মাঝে মাঝে মজা করবা। ভালো লাগে আমা’র। চল খেতে বসি অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।
ও নিজেই খাবার সার্ভ করছিল, তখন খেয়াল করলাম হাতে একটু ফোসকা উঠেছে।একি? রান্না ক’রতে গিয়ে হাত পু’ড়িয়ে ফে’লেছেন? বাহ্ খুব ভালো।৷ আমাকে ডাকলে স’মস্যা কোথায় ছিল? লেকচার তো ভালোই দিলেন, আমি তুমি মিলে আম’রা। কিন্তু নিজে’র বেলায় আ’লাদা তাইনা?
ও কিছু না। সামান্য একটু…চুপ। দাড়ান মলম লা’গিয়ে দিচ্ছি। আর শুনুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি আপনাকে। ওই হাত দিয়ে খেতে হবেনা।কিহ্!! সত্যি? তাহলে তো আমি ১০০ বার হাত পু’ড়িয়ে ফেলতে রাজি আছি।অমনি না?? থামুন।
আর একটা ও কথা বলবেননা ।আজকের দিনটা ও শেষ হয়ে গেলো। রাতে শুয়ে ছিলাম দুইজনই। আমি ওনাকে বললাম – শুনুন, একটা কথা বলবো??হ্যাঁ বলো।না থাক না না বলনা কিছুনা।
সে হ’ঠাৎ আমা’র মা’থাটা তার বুকের মধ্যে নিয়ে বলল ভালোবাসি কথাটা অ’তটাও ক’ঠিন না পা’গলীটা। তাছাড়া আমি তোমা’র স্বা’মী। আমাকে যখন যা খুশি তাই বলতে পারো। এত সংকোচ ক’রোনা।।আমি আর কোন কথা বলিনি৷ চোখ টা ব’ন্ধ করে থাকলাম।
হয়তো আজো ঘুম হবেনা। এই জেগে থাকা’টা ফিল্মের মতো না৷ কিন্তু এতে সত্যিকারের ভালোবাসা আছে। তাই এটা আরো বেশী সুন্দর। আগে বুঝতামনা। কিন্তু এখন ঠিকি বুঝি। ভালোবাসি “ও”কে। এরমধ্যেই
ও” ঘুমিয়ে গেছে। নাক ডা’কা শুরু হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে হাত পা ছুঁড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই ৷ ওর ভূড়ি আমা’র শ’রীর স্প’র্শ করে আছে। কিন্তু আমা’র খুব ভালো লাগছে৷ ওর গায়ের গন্ধ ভালো লাগছে।৷ জেগে থেকে ওর ঘুম দে’খতে ভালো লাগছে ।।